‘সরকার হুটহাট লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে দেয়, আমাদের কথা একবারও চিন্তা করে না। কীভাবে চলবো? আমরা বাঁচলেই কী আর মরলেই সরকারের কী?’ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শিশু মেলায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন অফিসগামী নুরুল হক।
করোনার সংক্রমণ রোধে জারিকৃত লকডাউনে গত সোমবার থেকেই সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী হাজারো মানুষ। সরকার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোকে তাদের কর্মচারী আনা-নেওয়ায় পরিবহন দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগই সেটা মানছে না।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর শিশুমেলায় এককোণে জমাট বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য অফিসগামী মানুষ। চলমান সীমিত পরিসরের লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ, যার কারণে রিকশা বা অন্যান্য বিকল্প বাহনের জন্য তাদের এই অপেক্ষা। তবে আজ বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। নগরজুড়ে সকাল থেকেই ঝুমবৃষ্টি। ফলে হেঁটে যাওয়ারও ফুরসত নেই।
শুধু শিশু মেলায়ই নয় রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, মাজার রোড, শেওড়া পাড়া, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে গণপরিবহন বন্ধ। সবমিলিয়ে এক নাভিশ্বাস অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
মিরপুর থেকে ধানমন্ডি যাবেন আক্কাস আলী। চাকরি করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুঃখের কথা কী আর বলবো। গতকাল অফিস করে রাত একটায় বাসায় ফিরেছি হেঁটে। ভালো করে বিছানায় গা এলাতে পারিনি। আবার সেই ভোরে অফিস যাত্রা। আমাদের আয় তো বেশি না যে রিকশা দিয়ে দিগুণ খরচে যাবো। তাই হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন আবার বৃষ্টি, ভিজে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।’
এদিকে ভোর থেকে হওয়া বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক সড়কেই পানি জমে গেছে। যার কারণে হাঁটতেও অসুবিধায় পড়ছে মানুষ। আর এ সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছে রিকশাচালকরা। খুশিমতো ভাড়া হাঁকছে। অনেকে এড়িয়ে গেলেও বেশিরভাগই দ্বিগুণ ভাড়াতেই সওয়ার হচ্ছে।
ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এক রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদেরও তো পেট আছে। এই বৃষ্টিতে রিকশা চালানো অনেক কষ্ট। ভাড়া একটু বেশি নিলেও মানুষজনের তো উপকার হচ্ছে! আর এসব লকডাউন বা বছরের কিছু সময় আমাদের এ সুযোগ আসে। সবসময় তো আমরা ভাড়া বেশি পাই না।’
একটু পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক পথচারী। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘রিকশাচালকরা তিনগুণ ভাড়া চাচ্ছে। এভাবে তো প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব না। তাই দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি একটু কমলেই হাঁটা শুরু করবো।’
লকডাউনের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে মিরপুর-১০ পুলিশবক্সে দায়িত্বরত একজন বলেন, ‘আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি জনসাধারণকে সচেতন করতে। এ ছাড়া সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছি। কেউ যদি আইন অমান্য করে তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি’।