সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

আওয়ামী লীগে অস্বস্তি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২ এএম, জানুয়ারি ১২, ২০২১

আওয়ামী লীগে অস্বস্তি বাড়ছে

মাঠে নেই বিরোধী দল। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি অনেকেই তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সারা দেশে সক্রিয়। ফলে নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিযোগিতায় জড়াতে হচ্ছে নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। এ নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সংঘাত। অন্তরালের নানা টানাপড়েন বেরিয়ে আসছে প্রকাশ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে রাজনীতির মাঠে আলোচনায় নোয়াখালীর নেতা আবদুল কাদের মির্জা এবং ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের নাম। এসব নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহল। কিন্তু বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না দলটির অনেক নেতাই। প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তারপর গণমাধ্যম। এক সপ্তাহ ধরে সর্বত্রই আলোচিত নাম আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার বিদায়ী মেয়র এবং কয়েক দিন পরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীও। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য’—তাঁর সাম্প্রতিক এই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল ফেসবুক ও ইউটিউবে। এ নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সমালোচনা করতে সুযোগটি হাতছাড়া করেনি বিরোধী দল বিএনপি। আবদুল কাদের মির্জা গতকাল সোমবার আবার বলেছেন, ‘চামচারা শেখ হাসিনার সব অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে।’ এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সাঈদ খোকন গত শনিবার ঢাকায় এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রকাশ্য সমালোচনা করেছেন তাঁরই উত্তরসূরি মেয়র ফজলে নূর তাপসের। রাজধানীর ফুলবাড়িয়ার এক মার্কেটের অবৈধ অংশ উচ্ছেদের পর সম্প্রতি সাঈদ খোকনসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। পরে এটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ঘটনার পর থেকে মেয়র তাপসের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ সাঈদ খোকন। তিনি মেয়র তাপস সম্পর্কে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আসছেন। মামলা দায়ের এবং ব্যবসায়ীদের দিয়ে সমালোচনা করার নেপথ্যে মেয়র তাপস রয়েছেন বলে অভিযোগ খোকনের। এদিকে তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে খোকনের বিরুদ্ধে গতকাল দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। দুই ব্যক্তি এই মামলা দুটি করেন। মামলার বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ‘তাপসের মানসম্মানের বাজারমূল্য কত মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণীর পর জানা যাবে। আইনি মোকাবেলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা-পাওনার হিসাব হবে।’ এর আগে শনিবার রাজধানীর হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে মেয়র তাপসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করে সাঈদ খোকন বলেন, তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করছেন। তাঁর মতো রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। তিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তাঁর নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন। এই টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে তিনি কোটি কোটি টাকা লাভ করেছেন এবং করছেন। তাই প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করার আগে নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। ফজলে নূর তাপস মেয়র থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন সাঈদ খোকন। দুজনের এই বিরোধ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ দলে অপরিহার্য নয়। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যেকোনো সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি নিতে পারবেন। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে গত বুধবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। মেয়র ফজলে নূর তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগ বিব্রত। বিষয়টি প্রকাশ্যে না এলেই ভালো হতো। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো ঘটনা কোথাও ঘটে থাকলে সে ব্যাপারে দলীয় নিয়মেই ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় রাজনৈতিক দল। রয়েছে নেতৃত্বেও প্রতিযোগিতা। তবে কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে পার পাবে তা নয়। অবশ্যই দলীয় কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সূত্র: কালের কণ্ঠ
Link copied!